ভবিষ্যতের জন্য টেকসই ও পরিবেশবান্ধব সমুদ্রপরিবহন ব্যবস্থা বিনির্মাণে প্রয়োজন উন্নততর প্রযুক্তি। এজন্য বিকল্প জ্বালানি হিসেবে স্টেনা লাইন বেছে নিয়েছে মিথানলকে। সুইডেনের কিয়েল-গোথেনবার্গ জলপথে প্রতিষ্ঠানটি সম্প্রতি চালু করেছে বিশ্বের প্রথম মিথানল চালিত ফেরি।

২৬ মার্চ ‘স্টেনা জার্মানিকা’ ফেরিটি দু’মাসের রূপান্তর প্রক্রিয়ার পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে পুনরায় কার্যক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। এরই মাধ্যমে বিশ্বের প্রথম শিপিং কোম্পানি হিসেবে স্টেনা লাইন পরিবেশবান্ধব মিথানলকে প্রধান জ্বালানী হিসেবে ব্যবহারকারী জাহাজের পরিচালনা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিল। এই মাইলফলককে স্মরণীয় করে রাখতে ২৭ মার্চ কিয়েলে এবং ৩০ মার্চ গোথেনবার্গে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। 

স্টেনা লাইনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কার্ল জোহান হ্যাগম্যান বলেন. ‘মিথানলের সম্ভাবনা নিয়ে আমরা নিঃসন্দেহে আশাবাদী, নৌপরিবহন খাতের ভবিষ্যৎ জ্বালানি হতে যাচ্ছে এটি। সাথে পরিবেশ সুরক্ষায় যা নৌখাতে একটি অভূতপূর্ব বিপ্লবের সূচনা করবে’।

মিথানল সহজে পচনশীল, পরিবেশবান্ধব এবং সাশ্রয়ী। এর ব্যবহারের ফলে নৌযানসমূহ থেকে সালফার ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান নিঃসরণের হার ৯৯% পর্যন্ত হ্রাস পাবে। শিপইয়ার্ডে স্টেনা জার্মানিকার ফুয়েল সিস্টেম ও ইঞ্জিন পরিবর্তনের কাজটি সম্মিলিতভাবে করেছে স্টেনা লাইন ও ওয়ার্টসিলা। ফেরিটিতে ব্যবহৃত প্রযুক্তিকে বলা হয় ডুয়াল ফুয়েল প্রযুক্তি যেখানে মিথানল প্রধান জ্বালানি হিসেবে থাকলেও জরুরি মুহূর্তে মেরিন গ্যাস অয়েল (এমজিও) ব্যবহারের সুযোগ থাকবে।

স্টেনা জার্মানিকার রূপান্তরিকরণ হয়েছে পোল্যান্ডের ড্যানস্ক শহরের রেমোনতোভা শিপইয়ার্ডে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘মোটরওয়েজ অফ দ্য সিজ’ উদ্যোগ এই প্রকল্পে সহযোগিতা প্রদান করেছে। মোট ২২ মিলিয়ন ইউরো ব্যয়ে সম্পন্ন এই প্রকল্প এরই মাঝে প্রযুক্তির সৃষ্টিশীল ব্যবহার এবং পরিবেশগত সুরক্ষার জন্য প্রশংসিত হয়েছে।  

স্টেনা লাইন বহু বছর ধরে এনার্জি সেভিং প্রোগ্রামে (ইএসপি) বিনিয়োগ করে আসছে যা টেকসই পরিবেশ উন্নয়নে প্রতিষ্ঠানটির অঙ্গীকারেরই প্রকাশ। 

মিথানলের নানাদিক

মিথানল একটি বর্ণহীন তরল পদার্থ যা উৎপন্ন হয় মূলত প্রাকৃতিক গ্যাস. কয়লা, জৈববর্জ্য অথবা কার্বন ডাই অক্সাইড থেকে। জ্বালানি হিসেবে মিথানলের ব্যবহারে অন্যান্য আন্তর্জাতিক জ্বালানির তুলনায় সালফারের নিঃসরণ ৯৯% এবং নাইট্রোজেনের নিঃসরণ ৬০% পর্যন্ত হ্রাস পায়। এছাড়াও এটি ব্যবহারে ক্ষতিকর পার্টিকেলের (পিএম) নিঃসরণ ৯৫% এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণ ২৫% কমে যায়। মিথানল থেকে নিঃসরিত উপাদানের পরিমাণ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) হতে নিঃসরিত উপাদানের প্রায় সমান। কিন্তু মিথানলের উৎপাদন প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ এবং এর ব্যবহারে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত চাহিদাও কম।

সূত্র: প্রেস রিলিজ, স্টেনা লাইন ডট কম

অনুলিখন- মনীষ দাশ

প্রদায়ক, বন্দরবার্তা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here