আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা ইনস অ্যান্ড কো এর মতে, বন্দর শিল্পের জন্য একটি নির্ধারণী বছর হতে যাচ্ছে ২০১৮ সাল। আর সে কারণেই সামনের বছরটিকে রূপান্তরের বছর হিসাবে আশা করতে পারেন বন্দর অপারেটররা।

অর্থনৈতিক গতিধারা পরিবর্তনের ঝোঁক, বাণিজ্য প্রবাহ এবং বিশ্বব্যাপী ডেমোগ্রাফিক নিদর্শন বদলে যাবার ফলে রূপান্তরটি ঘটবে। এর পাশাপাশি পোর্টের মালিকানা এবং আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের যে চলমান বিনিয়োগ তা, পরিবর্তনের মাধ্যমেও রূপান্তর ত্বরান্বিত হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাপী বন্দরগুলোর ভাগ্য পরিবর্তিত হয়েছে। এজন্য শেষ কয়েক বছরকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়।ইনস অ্যান্ড কো এর গ্লোবাল পোর্টস অ্যান্ড মেরিটাইম ইনফ্রাসট্রাকচার প্রাকটিস প্রধান টন ভ্যান ডেন বসচ একথা বলেন।

আফ্রিকা থেকে এশিয়া, ইউরোপ থেকে আমেরিকা পর্যন্ত কোনো অপারেটরই বন্দরের কার্যাবলী এবং এর বাণিজ্যিক বাস্তবতায় যে বদল এসেছে তা এড়াতে পারে না। সকল প্রত্যাশা এবং সম্ভাবনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, এই টার্মিনালগুলো এবং তাদের চলমান উন্নয়নের জন্য ২০১৮ সাল একটি রূপান্তরযোগ্য বছর হিসাবে প্রস্তুত হয়ে আছে। এবং যেসব অপারেটর সফলভাবে এই নৌপথগুলোতে জাহাজ চলাচল অব্যাহত রাখতে পারবে তারাই প্রকৃত বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে।

সেক্ষেত্রে চীনের বেল্ট এবং রোড ইনিশিয়েটিভই হলো এশিয়া ও আফ্রিকার পোর্টগুলোর পরিবর্তনের মূল চালিকাশক্তি।

ধারণা করা হচ্ছে, গত ১২ মাসে চীন এককভাবে পোর্ট এবং টার্মিনালে ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

বেল্ট এবং রোডসম্বন্ধে পশ্চিমের সচেতন হয়ে ওঠার বছর যদি হয় ২০১৭, তাহলে ২০১৮ সাল হচ্ছে সেই বছর যখন এর প্রভাব স্পষ্ট হয়ে দেখা দেবে। প্রকৃতপক্ষে, আমরা ইতিমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি বেল্ট এবং রোডের ম্যাক্রো-ইকোনমিকিক প্রভাব স্পষ্টত প্রতীয়মান হতে শুরু করেছে বিশ্বজুড়ে।

এর মধ্যে একটি হলো মালিকানার একত্রীকরণ। সম্প্রতি কসকো ও চায়না শিপিং একত্রে যৌথ সংস্থা হয়েছে। ২০২০ নাগাদ, ধারণক্ষমতায় এরা বৃহত্তম কনটেইনার টার্মিনাল অপারেটর হয়ে দাঁড়াবে। এবং এ কারণেই বৈশ্বিক র‌্যাংকিং-এ তাদের অবস্থান চতুর্থ এবং অষ্টম থেকে আরো উন্নীত হবে এ সময়কালে মধ্যে। বিশ্ব বাণিজ্য পরিচালনায় নিশ্চিতভাবেই এটি একটি নতুন ভারসাম্য আনবে।

ছোট ছোট পোর্ট অপারেটররা ভাবতে পারেন যে, এই গতি পরিবর্তনের ধারায় নিকট ভবিষ্যতে এই সেক্টরে তাদের অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি বুঝতে হবে তা হলো, কেউই এই উন্নয়ন থেকে অনাক্রম্য নয়। বরং তারা সেইসব অপারেটরদের বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবে যারা এখান থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা বের করে নিতে পারবে।

উদীয়মান এবং সীমান্তের দেশগুলোতে পোর্টের সুযোগ-সুবিধা দ্রুত বৃদ্ধি, সম্প্রসারণ এবং আধুনিকীকরণ হলো নতুন বাণিজ্য-পথ খোলা এবং ভোক্তা বাজার উদারীকরণের সরাসরি প্রতিফলন।

যদি ছোট অপারেটররা তহবিল সুরক্ষিত করতে পারে, তবে বড় বড় খেলোয়াড় দ্বারা পরিচালিত নতুন অপারেটরদের সাথে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সম্ভাবনা থাকবে। সবচেয়ে সফল হবে সেইসব কৌশল যেগুলো দীর্ঘমেয়াদী এবং ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক গতিধারাকে প্রতিফলিত করতে পারবে।

ইনস অ্যান্ড কো সংস্থা, অপারেটরদের ২০১৮ এবং তার পরের সময়ের পরিকল্পনার জন্য বিশেষ বাণিজ্যিক মান হিসাবে একটি ক্ষেত্র নির্দেশ করে যা ট্রান্সশিপমেন্ট নয়, বরং ক্রমান্বয়ে গেটওয়ে অপারেশনের দিকে ঝুঁকছে। এশিয়া ও আফ্রিকাতে বাণিজ্য প্রবাহ পরিবর্তনের এই নির্দিষ্ট কারণগুলো এখন ক্যাপটিভ মার্কেট ভেঙ্গে ফেলার জন্য প্রস্তুত হয়েছে।

ভ্যান ডেন বসচ বলেন আমরা কঙ্গো বা পূর্ব তিমুরের মতো দেশের দিকে তাকালে পরিষ্কারভাবেই দেখতে পাই যে, অপারেটররা গেটওয়ে টার্মিনাল স্থাপন করার মাধ্যমে এসব বাজারকে বিশ্ব বাণিজ্যে উন্মুক্ত করে দেবার কাজ শুরু করে দিয়েছে।

এটি এমন একটি প্যাটার্ন, বিশ্বব্যাপী যার পুনরাবৃত্তি ঘটে: বেল্ট এবং রোডের বিনিয়োগ স্থানীয় অবকাঠামো ও পরিবহন সংযোগগুলোর উন্নয়ন ঘটাচ্ছে এবং অপারেটররা নির্মাণ যজ্ঞের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সত্যি করে বলতে গেলে, সীমান্তবর্তী স্থানীয় অঞ্চলে কার্গো ভলিউমগুলোর পৌঁছানোর জন্য বিকল্প উপায় নেই বললেই চলে। যেসব পোর্ট অপারেটররা এই গতিধারা পরিচালনা করতে পারবে এবং যারা শুরুতেই এই বাজারে প্রবেশ করবে তারা নিজ নিজ দেশে স্থায়ী ও অপরিহার্য হিসাবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে সক্ষম হবে।

তবুও এই আইন সংস্থার ধারণা, উদীয়মান বাজারগুলোতে অর্থায়ন একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসাবেই থাকবে। এর পাশাপাশি কমপ্লায়েন্স, দুর্নীতি এবং ঘুষ-বিরোধী বিষয়গুলোতো থাকছেই। কিন্তু মৌলিকভাবে সংস্থাটি বিশ্বাস করে যে, আগামী বছর বিশ্বব্যাপী বন্দর শিল্পের বিনিয়োগে বিস্তৃত পরিসরে আরও বেশি গতি দেখা যাবে ।

২০১৮ সালে বন্দর বিশ্বে দেখা যাবে অটোমেশন এবং ব্লকচেইনের মতো নতুন নতুন উদ্ভাবনী প্রযুক্তি ব্যবহারে অব্যাহত গবেষণা এবং উন্নয়ন প্রচেষ্টা। যদিও এটি আশা করা ভুল হবে যে, আগামী ১২ মাসের মধ্যেই এগুলোর যেকোনো একটা সত্যিকারের গেম-চেঞ্জার হয়ে উঠবে। কিন্তু আমরা এমন একটা সুস্পষ্ট প্রতিবিম্ব আশা করতেই পারি যেখানে, সম্ভাব্য বাণিজ্যিক অ্যাপ্লিকেশনগুলো এবং বন্দর পরিচালনায় প্রতিটি প্রযুক্তির সুবিধাগুলোর মেলবন্ধন ঘটবে।

ইনস অ্যান্ড কো এর প্রতিবেদন অবলম্বনে-

বন্দরবার্তা ডেস্ক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here