পোর্ট অব নিউইয়র্ক অ্যান্ড নিউ জার্সি

পোর্ট অব নিউইয়র্ক অ্যান্ড নিউ জার্সি হলো যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও নিউ আর্ক মেট্রোপলিটন এলাকায় অবস্থিত একটি পোর্ট ডিস্ট্রিক্ট। স্ট্যাচু অব লিবার্টির প্রায় ২৫ ব্যাসার্ধজুড়ে এই বন্দর এলাকা বিস্তৃত। এটি আসলে একটি বিশেষ বন্দর ব্যবস্থা, যার অধীনে রয়েছে নিউইয়র্ক-নিউ জার্সি পোতাশ্রয় ও মোহনা, একটি বিমানবন্দর এবং রেল ও সড়ক সরবরাহ নেটওয়ার্ক।

নিউইয়র্ক সিটি ও নিউ জার্সির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় অঞ্চলে ৭৭০ মাইলের বেশি দীর্ঘ উপকূলজুড়ে বিস্তৃত নিউইয়র্ক-নিউ জার্সি হারবার এসচুয়ারি। একে বলা হয় বিশে^র অন্যতম বৃহৎ প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়। ২০১৯ সালে বন্দরটি কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় ব্যস্ততম ও পূর্ব উপকূলের ব্যস্ততম বন্দরের স্বীকৃতি লাভ করে।

পোর্ট অব নিউইয়র্ক অ্যান্ড নিউ জার্সি এলাকার মধ্যে রয়েছে দুটি ফরেন-ট্রেড জোন (এফটিজেড)। এই বন্দর ব্যবস্থার অধীনে থাকা বিমানবন্দরটি হলো আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান গেটওয়ে। এয়ার ফ্রেইট ফ্লাইটের দিক থেকে দেশটির ব্যস্ততম বিমানবন্দর এটি।

বন্দরটির দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর। একটি উপসাগর দিয়ে বন্দরে প্রবেশ করতে হয়, যার নাম নিউইয়র্ক বাইট। স্যান্ডি হুক ও রকঅ্যাওয়ে উপদ্বীপের মধ্যে এর অবস্থান। প্রায় ২৪০ মাইলের কমপ্লেক্স শিপিং চ্যানেল রয়েছে পোর্ট অব নিউইয়র্ক অ্যান্ড নিউ জার্সির। বন্দরে প্রবেশের জন্য বেশির ভাগ জাহাজকেই পাইলটেজ সেবা নিতে হয়। এছাড়া চ্যানেলের জটিল বাঁকগুলো পার হওয়ার জন্য বড় জাহাজগুলোকে টাগবোটের সাহায্য নিতে হয়।

বন্দরের পোতাশ্রয়ের প্রাকৃতিক গভীরতা প্রায় ৫ মিটার। তবে ১৮৮০ সালে খননের মাধ্যমে এর গভীরতা ৭ মিটারে উন্নীত করা হয়। ১৮৯১ সালে মেইন শিপ চ্যানেলটি ৯ মিটার গভীর করা হয়। ১৮৯৯ সালে রিভারস অ্যান্ড হারবারস অ্যাক্ট প্রণয়নের পর বে রিজ, রেড হুক ও স্যান্ডি হুক চ্যানেলের গভীরতা ১২ দশমিক ২ মিটারে উন্নীত করার জন্য ১২ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়। ১৯১৪ সালে বন্দরের প্রধান প্রবেশপথ হয় অ্যামব্রোস চ্যানেল। এর গভীরতা ছিল ১২ মিটার, প্রস্থ ৬০০ মিটার। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় খননের মাধ্যমে বন্দরের প্রধান চ্যানেলটি ১৪ মিটার গভীর করা হয়, যেন পানাম্যাক্সের মতো বড় আকারের জাহাজ বন্দরে প্রবেশ করতে পারে।

২০১৬ সালে মার্কিন সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর ২১০ কোটি ডলারের একটি খনন প্রকল্প সম্পন্ন করে। এর ফলে পোতাশ্রয় চ্যানেলের গভীরতা ১৫ মিটারে উন্নীত হয়। এই খননের ফলে পানামা ও সুয়েজ খাল অতিক্রমে সক্ষম বড় জাহাজগুলোও বন্দরে ভিড়তে পারছে।

পোর্ট অব নিউইয়র্ক অ্যান্ড নিউ জার্সিতে রয়েছে চারটি কনটেইনার টার্মিনাল। এগুলো সম্মিলিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলে সর্বোচ্চ সংখ্যক কনটেইনার হ্যান্ডলিং করে। বিশে^র ২০তম ও যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় ব্যস্ততম বন্দর এটি। বন্দরের কনটেইনার টার্মিনালগুলো হলো হাওল্যান্ড হুক মেরিন টার্মিনাল, পোর্ট জার্সি মেরিন টার্মিনাল, পোর্ট নিউ আর্ক-এলিজাবেথ মেরিন টার্মিনাল ও রেড হুক মেরিন টার্মিনাল। ইজারার ভিত্তিতে এগুলো পরিচালনা করে বিভিন্ন বেসরকারি পোর্ট অপারেটর।

২০১০ সালে বেওয়ান মিলিটারি ওশান টার্মিনালের ১২৮ একর জমি কিনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এর ফলে কনটেইনার পোর্ট ফ্যাসিলিটি সম্প্রসারণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেখানে একটি নতুন কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে কর্তৃপক্ষের, যেখানে বড় আকারের কনটেইনার জাহাজ ভিড়তে সক্ষম হবে।

বন্দরের প্রধান কনটেইনার টার্মিনালগুলোয় ইন্টারমোডাল ফ্রেইট ট্রান্সপোর্টের জন্য রয়েছে রেল নেটওয়ার্ক ‘এক্সপ্রেসরেল’। বন্দর দিয়ে বেশির ভাগ ভোগ্যপণ্যই পরিবহন হয় কনটেইনারে করে। তবে পেট্রোলিয়াম ও স্ক্র্যাপ মেটালের মতো কমোডিটি বাল্ক কার্গো অপারেশনের মাধ্যমেও পরিবহন করা হয়। সর্বশেষ প্রকাশিত লয়েড’স লিস্টে বিশ্বের শীর্ষ ১০০ বন্দরের মধ্যে পোর্ট অব নিউইয়র্ক অ্যান্ড নিউ জার্সির অবস্থান ২১।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here