আইসব্রেকার

পানিতে বরফ জমাট বেঁধে নৌপথ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে-এমন অঞ্চলে নৌযান চলাচল সচল রাখার ক্ষেত্রে আইসব্রেকার হলো কার্যকর এক সমাধান। বর্তমানে বিশ্বের অনেক বন্দরেরই নিজস্ব আইসব্রেকার সার্ভিস রয়েছে, যেন সেখানে পোর্ট কল দেওয়া জাহাজগুলোকে বন্দরে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়।

সাধারণ অর্থে আইসব্রেকার হলো এক ধরনের জাহাজ অথবা নৌকা, যেটি পানিতে জমাট বরফের আচ্ছাদন কেটে নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে। তবে সমুদ্র পরিবহন খাতে আইসব্রেকার বিশেষ অর্থ বহন করে। এটি যে কেবল নিজেই বরফ কেটে চলে, তা নয়। বরং অন্যান্য নৌযানের জন্যও চলাচলের পথ তৈরি করে দেয়।

আইসব্রেকারের প্রসঙ্গ এলেই আমাদের চোখের সামনে বরফ ভেঙে এগিয়ে চলা জাহাজের ছবি ভেসে ওঠে। তবে শুধু বড় জাহাজই নয়, বরং আইসব্রেকার তুলনামূলক ছোট আকারের নৌকাও হতে পারে। যেমন একসময় যুক্তরাজ্যের খালগুলোয় নৌযান চলাচল স্বাভাবিক রাখার জন্য আইসব্রেকিং বোট ব্যবহার করা হতো। আকার যা-ই হোক, আইসব্রেকার হতে গেলে ন্যূনতম তিনটি শর্ত পূরণ করতে হবে। সেগুলো হলো-স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি শক্তিশালী হাল (জাহাজ যে অংশের ওপর ভর করে পানিতে ভাসে), বরফ কাটার উপযোগী আকৃতি ও বরফ ঠেলে এগুনোর জন্য ইঞ্জিনের যথেষ্ট শক্তি।

স্বাভাবিক পুরুত্বের বরফের ক্ষেত্রে আইসব্রেকার সরাসরি আঘাত হেনে সেগুলো ভেঙে দেয়। আর বরফের পুরুত্ব যদি বেশি হয়, সেক্ষেত্রে ব্রেকারগুলো তার বাও বরফের ওপরে তুলে দেয় এবং নিজের ওজন দিয়ে সেই বরফের আস্তরণ ভেঙে দেয়। পরে বিশেষ নকশার হাল এই বরফের ভাঙা টুকরাগুলোকে জাহাজের পাশে সরিয়ে দেয় অথবা নিচের দিকে ঠেলে দেয়।

আইসব্রেকারের ইতিহাস বেশ পুরনো। শুরুর দিকে অভ্যন্তরীণ নৌপথের বরফ অপসারণে এর ব্যবহার বেশি ছিল। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে পুরনো যে আইসব্রেকারের কথা জানা গেছে, সেটি ১৩৮৩ সালে বেলজিয়ামের ব্রুজেস শহর ঘিরে থাকা খালগুলো পরিষ্কার রাখার কাজে ব্যবহৃত হতো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here