বাষ্পীয় জাহাজ

যদি প্রশ্ন করা হয় বাণিজ্যের বিশ্বায়নের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রয়েছে কোন কোন ফ্যাক্টরের, তাহলে যে নামটি অবধারিতভাবে চলে আসবে, সেটি হলো বাষ্পীয় জাহাজ। ট্রেড গ্লোবালাইজেশনের (১৮৭০-১৯১৩) প্রথম প্রবাহের প্রধান প্রভাবক বিবেচনা করা হয় একে। কিন্তু কেন? সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে হলে একটু পেছন ফিরে তাকাতে হবে।

যখন বাষ্পীয় ইঞ্জিনের প্রচলন ছিল না, তখন জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে বাতাসের গতিপ্রকৃতির ওপর নির্ভর করতে হতো। বায়ুপ্রবাহের দিকের ওপর নির্ভর করে সে সময় শিপিং রুট নির্ধারণ করা হতো। বাষ্পীয় জাহাজের আবির্ভাবের পর এই ধারায় পরিবর্তন আসে। যান্ত্রিক শক্তিচালিত জাহাজগুলোকে চলাচলের ক্ষেত্রে বাতাসের মর্জির ওপর নির্ভর করতে হয় না। ফলে নতুন নতুন বাণিজ্যপথ সৃষ্টি হয়। এভাবেই বিশ্বজনীন রূপ ধারণ করে বাণিজ্য।

বাষ্পীয় জাহাজকে ইংরেজিতে বলা হয় স্টিমশিপ। সেখান থেকে এসেছে সংক্ষেপিত রূপ স্টিমার। নামই বলে দিচ্ছে, এই ধরনের জাহাজগুলো বাষ্পীয় শক্তি দ্বারা চালিত হয়। এক বা একাধিক বাষ্পীয় ইঞ্জিন থাকে এসব জাহাজে, যেগুলো শক্তি সঞ্চালন করে প্রপেলার অথবা প্যাডেল হুইলে।

বাষ্পীয় জাহাজের প্রথম বাস্তবিক প্রয়োগ দেখা যায় উনিশ শতকের শুরুর দিকে। প্যাডেল স্টিমারগুলোর নামের শুরুতে ‘পিএস’ ও স্ক্রু বা প্রপেলার স্টিমারগুলোর নামের আগে ‘এসএস’ লেখা হতো। একসময় প্যাডেল স্টিমারের সংখ্যা অনেক কমে যেতে শুরু করে এবং প্রপেলার স্টিমারের প্রচলন বেড়ে যায়। সে সময় স্টিমশিপের সমার্থক হয়ে দাঁড়ায় ‘এসএস’। প্রথম দিকে স্টিমবোট চলাচল করত নদী ও খালগুলোয়। একপর্যায়ে সেগুলো আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দেওয়া শুরু করে। প্রথম সমুদ্রগামী বাষ্পীয় জাহাজের নাম ছিল ‘এক্সপেরিমেন্ট’, যেটি ১৮১৩ সালের জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের লিডস থেকে দেশটির দক্ষিণ উপকূলীয় শহর ইয়ারমাউথের উদ্দেশে যাত্রা করেছিল। আর বিশে^র প্রথম সমুদ্রগামী আয়রন স্টিমশিপ ছিল অ্যারন ম্যানবি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here