জাইরোকম্পাস

সমুদ্র বাণিজ্যের প্রচলন রয়েছে সেই প্রাচীনকাল থেকে। তবে সাগরে দিক নির্ণয়ের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে বিশ শতকে। আর এই পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে যেসব যন্ত্র ও প্রযুক্তি, জাইরোকম্পাস সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।

জাইরোকম্পাস হলো এক ধরনের অ-চুম্বকীয় দিকনির্দেশক যন্ত্র। একটি দ্রুত ঘূর্ণায়মান ডিস্ক ও পৃথিবীর ঘূর্ণনের ওপর ভিত্তি করে ভৌগোলিক দিক নির্ণয় করা হয় এই যন্ত্র দিয়ে। যান চলাচলের গতিপথ নির্ধারণের ক্ষেত্রে, বিশেষ করে জাহাজের নেভিগেশনে জাইরোকম্পাসের বহুল ব্যবহার দেখা যায়।

যান চলাচলের গতিপথ নির্ধারণ করা হয় যে সাতটি মৌলিক কার্যপ্রণালির ভিত্তিতে, জাইরোকম্পাস তার অন্যতম। এই দিকনির্দেশক যন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ হলো জাইরোস্কোপ। জাইরোস্কোপিক প্রিসিশনের ইফেক্টকে কাজে লাগিয়েই জাইরোকম্পাস তৈরি করা হয়।

চুম্বকীয় দিকনির্দেশক যন্ত্রের চেয়ে অন্তত দুটি ক্ষেত্রে জাইরোকম্পাস বাড়তি সুবিধা এনে দেয়। প্রথমত, পৃথিবীর নিজ অক্ষে ঘূর্ণনের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয় বিধায় এটি দিয়ে প্রকৃত উত্তর দিক নির্ণয় করা যায়, যা চুম্বকীয় যন্ত্র দিয়ে নির্ণীত উত্তর দিকের চেয়ে কিছুটা ভিন্ন ও নেভিগেশনের ক্ষেত্রে অধিক কার্যকর হয়। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন লৌহ-চুম্বকীয় পদার্থ যেমন ইস্পাতের কাঠামো চুম্বকীয় দিকনির্দেশক যন্ত্রের কার্যকারিতায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে পারে, জাইরোকম্পাসের ক্ষেত্রে যে সম্ভাবনা একেবারেই নেই। ফলে গতিপথ নির্ধারণও করা যায় নির্ভুলভাবে।

জাইরোকম্পাসের প্রথম পেটেন্ট করা হয় ১৮৮৫ সালে। অবশ্য ম্যারিনাস জেরার্দুস ভন ডেন বসের তৈরি এই জাইরোকম্পাসের ব্যবহার বাস্তবে দেখা যায়নি। ১৯০৬ সালে জার্মানির হারম্যান আনশুৎজ-কায়েম্ফে ব্যবহারযোগ্য প্রথম জাইরোকম্পাস আবিষ্কার করেন। কয়েক দফার সফল পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১৯০৮ সালে জার্মান ইম্পেরিয়াল নেভিতে এর সর্বাত্মক ব্যবহার শুরু হয়।

প্রাচীন দিকনির্দেশক যন্ত্রগুলো যেখানে জাহাজের গতি, আবহাওয়া, জাহাজ নির্মাণে ব্যবহৃত ইস্পাতের পরিমাণ ইত্যাদির ভিত্তিতে বিভিন্ন রিডিং দিত, সেখানে জাইরোকম্পাস সবসময় সঠিক দিক নির্দেশ করে। এ কারণে জাইরোকম্পাসকে নটিক্যাল নেভিগেশনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বিবেচনা করা হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here