মারিউপোল বন্দর

মারিউপোল বন্দর ইউক্রেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপকূলে তাগানরোগ উপসাগরের তীরে অবস্থিত। এই উপসাগর আবার আজোভ সাগরের সঙ্গে যুক্ত। ইউক্রেনিয়ান সি পোর্টস অথরিটির নিয়ন্ত্রণে বন্দরটি পরিচালিত হয়।

মারিউপোল বন্দরের যাত্রা হয় উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে রাশিয়ান সাউথ অঞ্চলে শিল্প খাতের দ্রুত প্রসারের সময়ে। সে সময় কালমিউস নদীর তীরে পণ্য বোঝাই-খালাসের জন্য একটি নৌবন্দর ছিল। কিন্তু এর গভীরতা ছিল অনেক কম। ফলে শিল্পায়নের যুগে যখন বড় বড় জাহাজ চলাচলের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়, তখন নৌবন্দরটি সেই সেবা দিতে পারছিল না। এ অবস্থায় একটি গভীর পানির বন্দর নির্মাণ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে।

এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই ১৮৮৬ সালে মারিউপোল বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রাথমিক পরিকল্পনায় বন্দরটি পাঁচ বছরের মধ্যে নির্মাণের কথা বলা ছিল। কিন্তু শিল্পমালিকদের পক্ষ থেকে অব্যাহত চাপ আসতে থাকায় তিন বছরের মধ্যেই এর নির্মাণ সম্পন্ন করা হয়। ১৮৮৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর বন্দরটি উদ্বোধন করা হয়। ১৮টি রেলকারে করে বন্দরে কয়লা এনে সেগুলো জাহাজে ভর্তি করা হয়। ৩ সেপ্টেম্বর কয়লাগুলো নিয়ে নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করে স্টিমশিপ মেদভেদিস্তা। এই তারিখটিকে মারিউপোল বন্দরের কার্যক্রম শুরুর দিন হিসেবে উদ্যাপন করা হয়।

রাশিয়ান সাউথ অঞ্চলের শিল্পোন্নয়নে মারিউপোল বন্দর অসামান্য ভূমিকা রেখেছিল। কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণের দিক থেকে ১৮৬৭ থেকে ১৯০৪ সাল পর্যন্ত এটি ছিল রাশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অসামরিক সমুদ্রবন্দর।

বন্দরটিতে বার্থ রয়েছে মোট ২২টি। এর বার্থিং লাইন ৩ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। সেখানকার পানির গভীরতা ৯ দশমিক ৭৫ মিটার। এই বন্দর কমপ্লেক্সে রয়েছে আজোভ সাগরের সবচেয়ে বড় রিপেয়ারিং ফ্যাসিলিটি।

বন্দরটিতে মাল্টিমোডাল কানেক্টিভিটির সুবিধা রয়েছে। বন্দরের পণ্য আনা-নেওয়ায় সুবিধার জন্য রয়েছে একটি সংযোগ রেলপথ ও একটি রেলস্টেশন। বন্দরের রেলপথের মোট দৈর্ঘ্য ২৭ দশমিক ১ কিলোমিটার। এছাড়া পাশেই রয়েছে একটি মহাসাড়ক, যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বন্দর।

মারিউপোল বন্দরে রয়েছে আউটার ও ইনার রোড নেটওয়ার্ক এবং অ্যাপ্রোচ চ্যানেল। ইনার রোডের মাধ্যমে যুক্ত রয়েছে গ্রেইন হারবার, কোল হারবার ও ওয়েস্টার্ন হারবার। বাল্ক (কয়লা, আকরিক লোহা, খাদ্যশস্য), জেনারেল কার্গো (ইস্পাত পণ্য, মেশিনারি), কনটেইনার সবই হ্যান্ডলিং করা যায় এই বন্দরে।

প্রতি বছর আনুমানিক আড়াই হাজার জাহাজ, ১ কোটি ৭৫ লাখ টন কার্গো ও ১০ হাজার টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয় মারিউপোল বন্দরে। সেখানকার কি ও ওয়্যারহাউসে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পোর্টাল ক্রেন, যেগুলো ৪০ টন পর্যন্ত কার্গো হ্যান্ডলিং করতে সক্ষম। এছাড়া ১০০ টন উত্তোলন সক্ষমতার ভাসমান ক্রেন, কোল লোডার, ভ্যাকুভেটরসহ কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম রয়েছে বন্দরে।

করোনা মহামারিসহ অন্যান্য সংকটের মধ্যেও মারিউপোল বন্দর ভালো পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। ২০২১ সালে এ বন্দরের আয় হয়েছে ৪ কোটি ডলারের বেশি। আর নিট মুনাফা হয়েছে ৩২ লাখ ডলার।

মারিউপোল ইউক্রেনের প্রিয়াজোভি অঞ্চলের বৃহত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পনগরী। বন্দরের কাছেই রয়েছে ইউক্রেনের বৃহত্তম দুটি ইস্পাত কারখানা। দেশটির বৃহত্তম মেশিন নির্মাণকারী কোম্পানির অবস্থানও এই শহরে।

মারিউপোল বন্দরে সারা বছরই নেভিগেশন চালু থাকে। তবে এক থেকে তিন মাস বরফ জমাট বাঁধার সময়ে জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে আইসব্রেকারের সহায়তা প্রয়োজন হয়। সাধারণত নভেম্বরের শেষ অথবা ডিসেম্বরের শুরুর দিকে বরফ জমাট বাঁধতে শুরু করে। মার্চের মাঝামাঝি সময়ে আবার তা গলতে শুরু করে। মার্চের শেষ অথবা এপ্রিলের শুরু নাগাদ তাগানরোগ উপসাগর মুক্তভাবে জাহাজ চলাচলের উপযোগী হয়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here